আদর্শ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার মধ্য দিয়ে একটি দেশের উন্নত মান নির্দেশিত হয়। প্রাথমিক শ্রেণী থেকে শুরু করে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার বিভিন্ন পর্যায়ে শিক্ষাদানের গুরু দায়িত্ব একনিষ্ঠভাবে পালন করে চলেছে এ প্রতিষ্ঠান।গত এক দশকে সরকারী অগ্রগামী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ উচ্চশিক্ষাদানে বিশেষ উৎকর্ষ লাভ করেছে। মানবিক,বিজ্ঞান, ব্যবসায় শিক্ষা কোর্স চালু রয়েছে এ প্রতিষ্ঠানে। তাছাড়া কলেজের এ কলেবর বৃদ্ধির সাথে সাথে আমাদের দায়িত্বও বেড়ে গেছে বহুগুণে।আমাদের স্বপ্ন সরকারী অগ্রগামী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ কে একটি আদর্শ প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা,যার মধ্য থেকে বেরিয়ে আসবে নিষ্ঠাবান, দায়িত্বপূর্ণ, সুশৃংখল এবং কর্মজীবনের উপযোগী জ্ঞানসমৃদ্ধ ছাত্রীবৃন্দ।বিদ্যালয়টিতে দুইটি চার তলা ভবন রয়েছে ।
দু'টি পাতা একটি কুড়ির দেশ হযরত শাহজালাল (র) এর পূণ্যভূমি প্রাকৃতিক সৌন্দযের অপূব লীলা নিকেতন সিলেট জেলা। এ জেলার প্রাণ কেন্দ্র জিন্দাবাজারে কয়েক একর জমির উপর মাথা উচু করে দাঁড়িয়ে আছে শতাবষের পুরানো, সিলেট - এর ঐতিহ্যবাহী বিদ্যালয়"সরকারি অগ্রগামী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়" সিলেট। সূচনালগ্ন থেকে আজ পর্যন্ত শিক্ষা-দীক্ষা, শিষ্ঠাচার, খেলাধূলা, সাহিত্য, সংস্কৃতি প্রতিটি ক্ষেত্রে অত্র বিদ্যালয়ের ছাত্রীরা কৃতিত্তের সাথে সাফল্য অজন করে আসছে। বিদ্যালয়টি সিলেট বিভাগের নারী শিক্ষার অগ্রগতিতে এক বিরাট ভূমিকা রাখছে। উল্লেখ্য যে, বিদ্যালয়টি ২০০০ সালে জাতীয় পযায়ে শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্বাচিত হয়েছিল। বিদ্যালয়ের কার্যক্রম কেবলমাত্র শিক্ষাদান ও জ্ঞানার্জনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে না। তাই শিক্ষার্থীদের সুপ্ত প্রতিভা বিকাশ সাধনের লক্ষ্যে , নিয়মিতভাবে বিদ্যালয় থেকে বিদ্যালয় বার্ষিকী প্রকাশ করা হয়। বিদ্যালয় বার্ষিকী কোনো বিদ্যালয়ের আভ্যন্তরীণ রুপরেখার পরিচয় বহন করে। এজন্য এখানে শিক্ষাদানের পাশাপাশি বিদ্যালয়ের বহুবিদ কার্যাবলীর এবং প্রয়োজনীয় তহবিল সমূহের সংক্ষিপ্ত পরিচয় পাঠক সমীপে তুলে ধরার চেষ্ঠা করছি।
আমাদের উদ্দেশ্য: প্রচলিত গতানুগতিক শিক্ষার কিছু সার্টিফিকেটধারী মানুষ তৈরি করা উদ্দেশ্য নয়। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের বহুমুখী সুপ্ত প্রতিভার বিককশ ঘটিয়ে সৎ-চরিত্রবান, ন্যায়-নিষ্ঠ, আর্দশবান তথা মানবিক গুনাবলী সমৃদ্ধ, দক্ষ ও সৃজনশীল কর্মী হিসেবে গড়ে তোলাই আমাদের লক্ষ্য। শিক্ষার্থীরা যেনো সত্যিকার মানুষরুপে গড়ে উঠে মানব প্রেমে উদ্ধুদ্ধ হয়ে দেশ ও জাতির কল্যাণে নিজেদের নিয়োজিত করতে পারে এটাই আমাদের মূখ্য উদ্দেশ্য।
বিদ্যালয় ও কলেজের সময়সূচী: বিদ্যালয়ে তৃতীয় থেকে দশম পর্যন্ত প্রায় ২০০০ ছাত্রী নিয়ে দুই শিফটে শ্রেণী কার্যক্রম চালু আছে। প্রভাতী শাখার কার্যক্রম শুরু হয় সকাল ৭.১৫ মিনিটে এবং শেষ হয় ১১.৩০ মিনিটে। চতুর্থ ঘন্টার পর টিফিন এর জন্য সকাল ১০.০০ ঘটিকার সময় ১০ মি: এর জন্য বিরতির ব্যবস্থা রয়েছে। দিবা শাখার কার্যক্রম শুরু হয় সকাল ১১.৩০ মি: থেকে এবং শেষ হয় বিকেল ৪.০৫ মিনিটে। তৃতীয় ঘন্টার পর টিফিন ও জোহর এর নামাজ আদায়ের জন্য দুপুর ১.৪০ মি: থেকে ১.৫৫ মি: পর্যন্ত বিরতির ব্যবস্থা রয়েছে। কলেজ শাখার কার্যক্রম শুরু হয় সকাল ১০.০০ ঘটিকায় এবং শেষ হয় বিকাল ৩.০০ ঘটিকায়।
ছাত্রীদের বিদ্যালয়ের পোশাক: বিদ্যালয়ে ছাত্রীদের জন্য নিদির্ষ্ট পোশাক রয়েছে। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রীদের জন্য সাদা জামা, সাদা বেল্ট, সাদা স্কার্ফ ও সাদা জুতা-মোজা পরিধান করা বাধ্যতামূলক এবং ৫ম থেকে দশম শ্রেণীর ছাত্রীদের জন্য সাদা কামিজ সালোয়ার, ওড়না, বেল্ট স্কার্ফ, সাদা জুতা-মোজা ও কলেজ ছাত্রীদের জন্য সাদা কামিজ, সালোয়ার, আকাশী ওড়না ও সাদা স্কার্ফ ও সাদা জুতা-মোজা পরিধান করা বাধ্যতামূলক। ছাত্রীরা প্রতিদিন বিদ্যালয়ের নিদির্ষ্ট পোশাক পরিধান করে বিদ্যালয়ে আসে, নিদির্ষ্ট পোশাক পরিধান করে না বিদ্যালয়ে ঢুকতে দেয়া হয় না।
প্রাত্যাহিক প্রারম্ভিক সমাবেশ: নিয়মিত সমাবেশ ছাত্রীদের মধ্যে শৃঙ্খলাবোধ ও আনুগত্যশীলতার উজ্জবীন ঘটায় এই উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে প্রতিদিন শ্রেণীর কাজ শুরু হওয়ার ১৫ মিনিট পূর্বে প্রভাতী ও দিবা উভয় শাখার ছাত্রীদের নিয়ে বিদ্যালয় মাঠে প্রারম্ভিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয় এবং এ সময় ছাত্রীরা ব্যান্ডের তালে তালে জাতীয় পতাকার সামনে সমবেত হয়। প্রধান শিক্ষক, সহকারী প্রধান শিক্ষক ও অন্যান্য শিক্ষকদের ছাত্রীরা পবিত্র কোরআন মজিদ থেকে সূরা পাঠ করার পর জাতীয় পতাকাকে সম্মান প্রদর্শন এবং শপথ বাক্য উচ্চারণ শেষে সমবেত কণ্ঠে গেয়ে উঠে " আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি।
পাঠ্য বিষয়: আমাদের বিদ্যালয়ে বিজ্ঞান, মানবিক ও বাণিজ্য বিভাগ এবং কলেজে বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষা শাখা চালু রয়েছে। শিক্ষার্বোড কর্তৃক অনুমোদিত সবক'টি আব্যশিক ও ঐচ্ছিক বিষয় পড়াশুনার দ্বারা ছাত্রীদের জন্য উন্মুক্ত রয়েছে। এখানে ছাত্রীরা নিজেদের মেধা রুচি, জীবনের লক্ষ্য অনুসারে কম্পিউটার শিক্ষাসহ যে কোন ঐচ্ছিক বিষয় অধ্যয়নের অর্পূব সুযোগ পাচ্ছে।
পাঠ্যক্রম: পরীক্ষা পদ্ধতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে প্রতিবছরই নতুন বছর শুরু হওয়ার পূর্বে পাঠ্যক্রম প্রণয়ন করা হয়। বছরের প্রথমেই ছাত্রীদের হাতে পাঠ পরিক্রমা (সিলেবাস) তুলে দেওয়া হয়। পাঠ্যক্রমে প্রথম সাময়িক, ২য় সাময়িক ও বার্ষিক পরীক্ষা সমূহের প্রশ্নের ধারা, পাঠ্য বিষয়, মানবন্টন এবং বিদ্যালয়ের ছুটির তালিকা লিপিবদ্ধ থাকে।
পরীক্ষা পদ্ধতি: সরকারি নির্দেশ মোতাবেক বিদ্যালয়ে তিনটি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম সাময়িক, ২য় সাময়িক ও বার্ষিক পরীক্ষা ছাড়াও ছাত্রীদের কৃতিত্ব যাচাই এর জন্য এবং পাঠ্য বিষয়ে মনোযোগী করে তোলার জন্য শ্রেণী কক্ষে শিক্ষকবৃন্দ নিয়মিত ক্লাস পরীক্ষা নিয়ে থাকেন। এসবিএ পদ্ধতি চালু হওয়ার পর বিভিন্ন বিষয়ের উপর শিক্ষগণ পৃথক পরীক্ষা নিয়ে থাকেন।
পরীক্ষার খাতা মূল্যায়ন: আমাদের বিদ্যালয়ের আভ্যন্তরীণ প্রতিটি পরীক্ষায় ছাত্রীদের উত্তরপত্রে কোড নম্বর প্রদান করা হয়। কোড নম্বর উত্তরপত্র মূল্যায়নে সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা বজায় রাখা যায় বিধায় বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষকগণের সর্বসম্মতি সিদ্ধান্তক্রমে এ প্রক্রিয়ায় উত্তরপত্র মূল্যায়ন হয়ে আসছে।
শ্রেণীকক্ষে পাঠদান: প্রারম্ভিক সমাবেশ শেষে ছাত্রীরা শ্রেণীকক্ষে সুশৃঙ্খলভাবে বসে, তারপর ক্লাস শুরু হয়। শ্রেণীর কার্যক্রম শনিবার থেকে বুধবার পর্যন্ত সপ্তাহে ৫ দিন প্রতিদিন ৭ পিরিয়ড এবং প্রতি বৃহস্পতিবার ৪ পিরিয়ড ক্লাস হয়। শ্রেণীকক্ষে পাঠদান ক্ষেত্রে অত্র বিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দের উৎসাহ, উদ্দীপনা এবং ঐকান্তিকতা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। শ্রেণীকক্ষে পাঠ সহজ, বোধগম্য, চিত্তকর্ষক ও আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য শিক্ষকবৃন্দ নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সাথে পাঠদান করে থাকেন এবং পাঠ উপযোগী বিভিন্ন উপকরণ চার্ট, মডেল , মানিচত্র, তালিকা ইত্যাদি ব্যবহার করে থাকেন।
জাতীয় টিভি বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ: বিদ্যালয়ের বিতর্ক দল দায়িত্ব প্রাপ্ত শিক্ষকগণের তত্ত্বাবধানে প্রতিবছর জাতীয় টেলিভিশন স্কুল বিতর্ক প্রিতযোগিতায় অংশগ্রহণ করে থাকে।
টিফিন ব্যবস্থা: ক্লাসের একঘেয়েমি দূর ও নামায আদায়ের জন্য বৃহস্পতিবার ব্যতিরেকে সপ্তাহের ৫ দিন উভয় শিফটে রয়েছে বিরতির ব্যবস্থা। প্রভাতী শাখায় ৪র্থ ঘন্টার পর এবং দিবা শাখায় ৩য় ঘন্টার পর বিরতি দেওয়া হয়। এ সময় ছাত্রীদের মাঝে টিফিন বিতরণ করা হয়। ছাত্রীদের চাহিদা মোতাবেক ও কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী টিফিন এর ব্যবস্থা করা হয়। এ কমিটি তহবিলের দায়িত্বে রয়েছেন অত্র বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মিসেস নাজমা ও জনাব ঝলক রঞ্জন তালুকদার।
বিদ্যালয় ভবন: আমাদের বিদ্যালয়ে রয়েছে তিনটি দ্বিতল ভবন, তিনটি একতলা ভবন এবং দুটি টিন শেড ভবন। এই ভবনগুলো ছাড়া বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে কলেজ শাখার জন্য একটি চারতলা ভবন রয়েছে এবং বিদ্যালয়ে ছাত্রীদের আবসিক সুবিধার জন্য একটি দ্বিতল ছাত্রী নিবাস রয়েছে।
নামাজ কক্ষ: নামাজ ঠিকমতো আদায়ের লক্ষ্যে বিদ্যালয়ে রয়েছে একটি নিদির্ষ্ট নামাজ ঘর। নামাজ ঘরে ছাত্রী ও শিক্ষিকাগণ নামাজ আদায় করেন। শিক্ষকগণ বিদ্যালয়ের বাইরে মসজিদে নামাজ আদায় করেন।
শিক্ষক-শিক্ষিকাগণের কক্ষ: প্রধান শিক্ষকের জন্য রয়েছে একটি নিদির্ষ্ট কক্ষ। তার পাশেই অফিস সহকারীদের অফিস কক্ষ রয়েছে। প্রভাতী ও দিবা শাখার সহকারী প্রধান শিক্ষগণের জন্য একটি কক্ষ। প্রভাতী ও দিবা শাখার শিক্ষিকাবৃন্দের জন্য রয়েছে একটি শিক্ষিকা মিলনায়তন এবং প্রভাতী ও দিবা শাখার শিক্ষকবৃন্দের জন্য রয়েছে একটি শিক্ষিক মিলনায়তন।
অডিটরিয়াম: বিদ্যালয়ে কোনো অডিটরিয়াম না থাকায় গ্রন্থাগারের পাশে একটি কক্ষকে মিনি অডিটরিয়াম বানানো হয়েছে। এখানে বিদ্যালয়ের বিভিন্ন সভা ও অনুষ্ঠানাদি অনুষ্ঠিত হয়।
বিজ্ঞানাগার: আমাদের বিদ্যালয়ে রয়েছে ০৩ টি বিজ্ঞানাগার। এখানে ছাত্রীরা অভিজ্ঞ শিক্ষবৃন্দের তত্ত্বাবধানে হাতে কলমে পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে জ্ঞান অর্জন করে থাকে।
গ্রন্থাগার: অজানাকে জানা ও জ্ঞানের পিপাসা মেটানোর জন্য বিদ্যালয়ের কলেজ ভবনের চতুর্থ তলায় রয়েছে অসংখ্য মূল্যবান গ্রন্থ সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার। গ্রন্থাগারিকের পদ শূন্য থাকায় বর্তমানে একজন অত্যাবশ্যকীয় কর্মচারীর (গ্রন্থাগারিক) তত্ত্ববধানে গ্রন্থাগারটি পরিচালিত হচ্ছে। এখানে ছাত্রীরা ক্লাসের অবসরে, গল্প, কবিত, উপন্যাস বই ছাড়াও জ্ঞান অর্জনের অন্যান্য বই পড়ার সুযোগ পায়।
কম্পিউটার কক্ষ: বিদ্যালয়ে রয়েছে একটি নিদির্ষ্ট কম্পিউটার কক্ষ। সুন্দরভাবে সাজানো গুছানো এই কক্ষে ২০টি কম্পিউটার রয়েছে। অন্য দু'টি কম্পিউটার প্রধান শিক্ষক ও অফিস সহকারীর কক্ষে রয়েছে। কম্পিউটার কক্ষের কম্পিউটারগুলোতে অত্র বিদ্যালয়ের অভিজ্ঞ শিক্ষকবৃন্দের তত্ত্ববধানে ছাত্রীরা হাতে কলমে কম্পিউটার জ্ঞান অর্জন করছে। এ ছাড়া কলেজ শিক্ষার্থীদের জন্য মিসেস খালেদা সুজাতা পারভীন, সাহানা জাফরীন রোজী,।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস